শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) ভারতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২দিনের রাষ্ট্রীয় সফরকে ঘিরে তিস্তা পাড়ের ৩০ লাখ মানুষ ভারতের সাথে তিস্তা নদীর পানি চুক্তি নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। তারা তিস্তার পানি চুক্তি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদির হস্তক্ষেপ কামনা করে এদিন দাবি তুলবে এমন আভাস পাওয়া গেছে। তবে তিস্তা চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনো আছে জল্পনা-কল্পনা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে শেখ হাসিনা নয়াদিল্লি সফরে যাচ্ছেন। এ সফরকে ঘিরে তিস্তা পাড়ের ৩০ লাখ মানুষ স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে তিস্তা নদীর পানি চুক্তির বিষয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কি করেন। তার সফরের ফলে তিস্তা নদীর পানি চুক্তির বিষয়ে ভারতের অবস্থান সম্পর্কে তিস্তা পাড়ের মানুষের বিভ্রান্তি দূর হবে। তিস্তা নদীর পানি চুক্তির সাথে লালমনিরহাট জেলার জীববৈচিত্র, পরিবেশ, তিস্তা পাড়ের মৎস্যজীবী মানুষের বেকার সমস্যার সমাধান, তিস্তা ব্যারেজের সেচ প্রকল্প, দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ছিটমহল বন্যা প্রতিরোধ ও নদী ভাঙনরোধে জড়িত।
প্রাণিবিদ্যা বিশেষজ্ঞ জানান, তিস্তা নদীর পানির সাথে তিস্তা পাড়ের মানুষের জীবন জীবিকা, বাঁচা মরা ও জীববৈচিত্র নির্ভর করছে। তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ থাকলে উত্তরাঞ্চল রুগ্ন প্রক্রিয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে। তিস্তা নদীতে পানি থাকলে সারা বছর নিম্ন আয়ের মানুষ নদীতে মাছ ধরে নিজের পরিবারের জন্য জীবিকা নির্বাহ করতে পারবে। তিস্তা নদীতে পানি না থাকলে বিপর্যস্থ মরু প্রক্রিয়ার দিকে যাবে রংপুর বিভাগের লালমনিরহাট, রংপুর, নীলফামারী ও কুড়িগ্রাম জেলার ৩০লাখ মানুষ। ইতোমধ্যে তিস্তা নদী থেকে হারিয়ে গেছে, মিঠা পানির ঘড়িয়াল, শুশুক, কুমির ও ভোদর। শোল-শাল, আইর, চিতল মাছসহ নানা প্রজাতির মাছ। এক সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে তিস্তা নদীতে পাওয়া যেত। তিস্তা নদীতে পানি প্রবাহ সারা বছর না থাকায় তিস্তা নদী কেন্দ্রিক নদীবন্দর এখন মানুষের কাছে শুধুই স্মৃতি হয়ে আছে। ভারতের সাথে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহের চুক্তি হলে তিস্তা নদী তার পুরনো রূপযৌবন ফিরে পাৰে। মানুষ সেই আশাই এখন করছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নিকট। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে ভারতের ঐতিহাসিকভাবে সম্পর্ক রয়েছে। এ সম্পর্কের উপর ভিত্তি মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকার সহায়তা করেছে। এ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গুরুত্বের প্রতিফলন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর। বিগত সরকারের সময় তিস্তা পাড়ের প্রায় ৩০ লাখ মানুষ আশাবাদী ছিল। এবারে তিস্তা নদীর পানি চুক্তি হবে। বাংলাদেশ তার পানির ন্যায্য হিস্যা পাবে। ফলে বৃহত্তর রংপুর জেলায় মরু প্রক্রিয়ার চির অবসান ঘটবে। ১৯৭১-র মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারত বাংলাদেশের পাশে ছিল। তারা বাঙালিদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করে দেশকে হানাদার যুক্ত করেছে। সেই প্রতিবেশী বৃহত্তর রাষ্ট্র ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মুদির সাথে হাতে হাত মিলিয়ে তিস্তা পানি চুক্তি হলে শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখতে পারে। এটাই এখন তিস্তা পাড়ের মানুষের স্বপ্ন। প্রায় ৪শ কিঃমিঃ দীর্ঘ খরস্রোতা তিস্তা নদী ভারতের সিকিম, পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি হয়ে বাংলাদেশের লালমনিরহাট জেলার প্রবেশ করেছে। লালমনিরহাট ও রংপুর জেলার মাঝ দিয়ে প্রায় ১২৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে কুড়িগ্রাম জেলার ব্রহ্মপুত্র নদে গিয়ে মিশে গেছে। ১৯৮৯ সালে তিস্তা নদীর বাংলাদেশে প্রবেশের স্থল থেকে মাত্র ১৫কিলোমিটার ভাটিতে লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানী নামক স্থানে তিস্তা নদীকে শাসন করে দেশের বৃহত্তর তিস্তা সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ নির্মাণ করা হয়। কারণ তিস্তা নদীর পানি প্রত্যাহার করে রংপুর, নীলফামারী ও দিনাজপুর জেলার ১৬টি উপজেলায় বর্ষা ও শুল্ক মৌসুমে ১১ লাখ হেক্টর ফসলি জমিতে সেচ দেয়া হবে। এতে করে বরেন্দ্র অঞ্চল হিসাবে খ্যাত জেলা ৩টিতে অধিক ফসল উৎপাদন সম্ভব হবে। তবে তিস্তা ব্যারেজ লালমনিরহাট জেলার অবস্থিত হলেও লালমনিরহাট জেলা সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। এ জেলাবাসীর কোন উপকারে আসেনি ব্যারেজটি। বরং পানি প্রত্যাহারের ফলে তিস্তা নদীটির ১২০ কিলোমিটার ভাটিতে লালমনিরহাট ও রংপুর জেলার ৩০ লাখ মানুষ বেকায়দায় পড়েছে। নদীতে শুষ্ক মৌসুমে পানি থাকে না। তাই দিন দিন মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে। অপমৃত্যু ঘটেছে তিস্তা নদী ও পাড়ের জীববৈচিত্রের। তিস্তা নদীর প্রবেশ পথেই বাম পাশে পড়েছে দহগ্রাম-আঙ্গরপোত ছিটমহল।
শেখ হাসিনা-মোদির বৈঠকঃ নয়াদিল্লিতে শুক্রবার সন্ধ্যায় গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক ইস্যুতে একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
বাংলাদেশ নির্ধারিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে পারস্পরিক স্বার্থের অন্যান্য ইস্যুসহ তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয়টি উত্থাপন করবে মর্মে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, ৯ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অংশগ্রহণ ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কের সোনালি অধ্যায়ে আরও একটি মাত্রা যুক্ত করবে বলে জানা গেছে।